বারবিয়ানা স্কুল থেকে এবং আমাদের শিক্ষা
মংলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত, চট্টগ্রামে ৯। ঘূর্ণিঝড় “সিডর” আসছে, সারাদিন বৃষ্টি। সাথে ঠান্ডা দমকা হাওয়া। এ অবস্থায় আমরা জনা সাতেক ছেলে বসেছিলাম একসাথে। বসার উদ্দেশ্য একেকজনের কাছে একেক রকম। তবে একটা সাধারণ তাড়না সবার মনেই – কিছু একটা করতে হবে। সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য না থাকলেও এটা নিশ্চিত, প্রস্তুতির সময় বর্তমান। নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে, জ্ঞান বাড়াতে হবে, সাম্প্রতিক বিষয়াদির পর্যালোচনার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। প্রথম দিনে ঠিক করা ছিলো “আপনাকেই বলছি স্যার-বারবিয়ানা স্কুল থেকে”- এই বইটি।
এ বইটা লেখা ইটালিয়ান প্রেক্ষাপটে, তৎকালীন স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। তখনকার শিক্ষাবয়বস্থার সমালোচনা করা হয়েছে তীব্র ভাষায়। পরীক্ষা পদ্ধতি, পাঠ্যক্রম, শিক্ষকদের অসহযোগীতা, দরিদ্রশ্রেণীর জন্য শিক্ষার সার্বিক অনুপযোগীতা – সমালোচনা হয়েছে এমন কিছু বিষয় নিয়ে। পাশাপাশি দেখানো হয়েছে সমাধানের বিকল্প পথ- যা বলবৎ আছে বারবিয়ানা স্কুলে।
ন্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। এ ব্যবস্থায় কারা শিক্ষিত হচ্ছে? আদৌ শিক্ষিত হচ্ছে কি? শিক্ষার হার কম হবার পেছনে কারন কি? স্কুল থেকে ঝরে যাবার কারন গুলোই বা কি? আলোচনার সারবস্তু হলোঃ
· শিক্ষার দূরবস্থার জন্য শিক্ষকরা যতটা দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী শিক্ষাব্যবস্থা।
· শিক্ষার্থীরা বিদ্যালাভের মধ্যে কোনো আনন্দ লাভ করেনা, তারা এর তাৎপর্য বোঝেনা। পড়ালেখা চলে পরীক্ষা পাশের জন্য, নম্বরের জন্য। একগাদা বিষয় মুখস্ত করতে গিয়ে তাদের মধ্যে বিরাজ করে পরীক্ষাভীতি। ভয় আর বিরক্তি নিয়ে তাই পড়াশোনা আর বেশি আগায় না।
· অর্থনৈতিক দূরবস্থা
· জ্ঞানের বিশেষায়ন, আজকে পড়াশোনার উদ্দেশ্য হয়ে দাড়াচ্ছে অর্থোপার্জন, কখনোই জ্ঞানার্জন নয়। এজন্য আজ সবার প্রথম পছন্দ ইঞ্জিনিয়ারিং বা ব্যবসায় প্রশাসন।
· শহরের সাথে গ্রামের তুলনা করলে শিক্ষকের অভাব, অভিবাবকের অবহেলা চোখে পড়ে।
· বিনোদনের সহজলভ্যতা অনেক ক্ষেত্রে দায়ী।
সব মিলিয়ে দায়ী করা যায় পরিবেশকে বা ব্যবস্থাকে যার মধ্যে আছে শিক্ষক সম্প্রদায়, শিক্ষাব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ ইত্যাদি, কোনো ভাবেই শিক্ষার্থীর উপর এতগুলি বিষয়ের দায়ভার চাপানো যায় না।