Sunday, June 29, 2008

Why socialism? - Albert Einstein

কেন সমাজতন্ত্র?
মূলঃ আলবার্ট আইনস্টাইন
[এই লেখাটি প্রথম ১৯৪৯ সালে Monthly Review তে ছাপা হয়]
somewhereinblog.net

অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে অদক্ষ কারো কি সমাজতন্ত্র বিষয়ে ধারণার প্রকাশ করা উচিত? অনেকগুলি কারণে আমি মনে করি করা উচিত।

প্রথমত, প্রশ্নটিকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে দেখা যাক। এটা মনে হতেই পারে যে, জোতির্বিদ্যা এবং অর্থনীতির মধ্যে পদ্ধতিগত কোনো পার্থক্য নেইঃ উভয় বিষয়ের বিজ্ঞানীরা সাধারণভাবে নির্দিষ্ট কিছু ঘটনার ব্যাখ্যার্থে গ্রহণযোগ্য কতগুলি সুত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করেন, যাতে এই সব ঘটনাগুলির পারস্পরিক সম্বন্ধের ব্যাপারগুলি বোঝা যায়। কিন্তু আসলে এদের মধ্যে পদ্ধতিগত অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। অর্থনীতির ক্ষেত্রে সাধারণ সুত্র আবিষ্কার অনেক কঠিন কারণ অর্থনৈতিক ঘটনাসমূহ প্রায়শই এত বেশি নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত হয় যে তাদেরকে আলাদাভাবে পরিমাপ করা যায় না। তাছাড়া মানব ইতিহাসের তথাকথিত সভ্যপর্যায়ের শুরু হতে আজ পর্যন্ত যে অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে, তা এমন কিছু নিয়ামকের দ্বারা নির্ধারিত ও প্রভাবিত যেগুলি কোনোভাবেই স্রেফ অর্থনৈতিক নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইতিহাসের বেশিরভাগ জাতি তার অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধজয়ের উপর ঋণী। বিজয়ী জনগোষ্ঠী আইনগত এবং অর্থনৈতিকভাবে বিজিত দেশের সুবিধাভোগকারী অবস্থানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। নিজেদের জন্য সৃষ্টি করেছে ভূ-সম্পত্তির উপর একচেটিয়া অধিকার এবং স্ব-শ্রেনী হতে যাজক সম্প্রদায়কে নিয়োগ করেছে। এই যাজক সম্প্রদায় শিক্ষাব্যস্থাকে কব্জা করার মাধ্যমে সামাজিক শ্রেনীভাগকে একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠানের রূপ দিয়েছে, এবং এমন এক মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা করেছে, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসচেতনভাবেই মানুষের সামাজিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।

কিন্তু ঐতিহাসিক ভাবে আমরা বিগতকালের কথাই বলি, আমরা কোনোভাবেই মানব প্রবৃত্তির উন্নয়নের সেই স্তর থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি যাকে থোর্স্টেইন ভেব্লেন “the predatory phase” বলে আখ্যায়িত করেছেন। যত ধরণের অর্থনৈতিক ঘটনাসমূহ প্রত্যক্ষ হয় সবই এই কালের এবং এর থেকে প্রাপ্ত সুত্রসমূহ কালান্তরে গ্রহণযোগ্য নয়। যেহেতু সমাজতন্ত্রের আসল উদ্দেশ্য হলো মানব উন্নয়নের এই predatory phase কে সম্পূর্ণভাবে অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া, তাই বর্তমানের অর্থনৈতিক বিজ্ঞান ভবিষ্যতের সমাজতান্ত্রিক সমাজকে খুব বেশি স্পষ্ট করতে পারে না।

দ্বিতীয়ত, সমাজতন্ত্র মূলত সামাজিক-নৈতিক একটি পরিণতির দিকে উদ্দিষ্ট। বিজ্ঞান কোনোভাবেই কোনো পরিণতির সৃষ্টি করে না, এমনকি ধীরে ধীরে সঞ্চারিতও করতে পারেনা, বড়জোড় পরিণতিতে পৌছানোর জন্য উপাদানের যোগান দিতে পারে। কিন্তু এই পরিণতিসমূহ কল্পিত হয় সুউচ্চ নৈতিক আদর্শের কিছু ব্যাক্তির দ্বারা। আর যদি এসব অপরিহার্য ও প্রচন্ড পরিণতিগুলি ইতোমধ্যে অর্জিত না হয়ে থাকে তবে,কিছু মানুষ এগুলোকে আত্মস্থ করে এবং সামনের দিকে নিয়ে যায়। এসব মানুষেরাই সমাজের সুস্থির বিবর্তনকে অর্ধসচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

এসব কারণেই আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে যতে মানবিক সমস্যার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিসমূহকে অতিশায়িত করা না হয়, এবং এটা মনে করা উচিত নয় যে শুধু মাত্র সুদক্ষ লোকেরাই সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিতকারী বিষয়াদি নিয়ে বক্তব্য দেয়ার আধিকার রাখে।

অনেকদিন ধরেই অসংখ্য মানুষ এই দাবি করে আসছেন যে সমাজ একটা সংকটের মধ্যে দিয়ে পার হচ্ছে, সমাজের স্থিরতা বা ভারসাম্য প্রচন্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। এটা এমন এক সময়ের বৈশিষ্ট যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার সম্প্রদায় বা সংগঠনের প্রতি উদাসীন এবং ক্ষেত্র বিশেষে বৈরী হয়ে উঠে। আমার কথাকে বোঝানোর জন্য আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। সম্প্রতি আমি একজন বুদ্ধিমান ও বিদ্বান মানুষের সাথে আরেকটা যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলছিলাম। আমার মত ছিলো যে, আরেকটা যুদ্ধ মানুষের অস্তিত্বকে মহাসংকটে ফেলে দেবে এবং এই মন্তব্য করেছিলাম যে শুধুমাত্র কোনো আন্তর্জাতিক মহাসংস্থাই পারে এই মহাবিপদ থেকে সুরক্ষা দিতে। তখন ঐ ব্যাক্তি বলে উঠলেন, “মানবজাতির পরিণতি ধ্বংস, এটা থেকে আপনি এত বিপরীতে কেন?”।

আমি নিশ্চিত যে মাত্র এক শতাব্দী বা তারও কম সময় আগে কেউ এ ধরণের কোনো মন্তব্যই করতে পারতো না। যারা নিজের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ এবং সফল হবার কোনো আশাই রাখেন না তারাই এ ধরণের মন্তব্য করেন। এর উৎস এমন এক ধরণের বিষাদপূর্ণ একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতা, যাতে এ সময়ের বেশিরভাগ মানুষই ভুগছে। এর কারণ কি? এর থেকে মুক্তির কোনো উপায় কি আছে?

এ ধরণের প্রশ্ন উত্থাপন করা সহজ হলেও কোনো প্রকার নিশ্চয়তার সাথে এর উত্তর দেয়া কঠিন। যদিও আমি এটা সম্বন্ধে অবগত যে আমাদের চিন্তা ও চেষ্টাগুলো প্রায়শই অসংগতিপূর্ণ এবং অস্পষ্ট, তাদেরকে সহজ ও সাধারণ সুত্রের সাহায্যে প্রকাশ করা যায় না, তবুও আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

মানুষ হলো একই সাথে বিচ্ছিন্ন ও সামাজিক। বিচ্ছিন্নভাবে সে নিজের ও তার আশেপাশের সবার অস্তিত্বকে রক্ষা করার চেষ্টা করে, নিজের ব্যক্তিগত ইচ্ছাগুলোকে পূরণ করার চেষ্টা করে, তার সহজাত সামর্থ্যের উন্নয়ন করে। আর সামাজিকভাবে সে তার আশেপাশের মানুষের স্বীকৃতি ও সম্প্রীতিলাভের চেষ্টা করে, তাদের সাথে আনন্দকে ভাগ করার চেষ্টা করে, তাদের দুঃখ লাঘবের চেষ্টা করে, এবং তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের চেষ্টা করে। শুধুমাত্র এসব বিবিধ পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই মানুষের বিশেষ চরিত্র গড়ে উঠে। আর এসবের বিশেষ সন্নিবেশ নির্ধারিত করে একজন মানুষ তার অভ্যন্তরের ভারসাম্য কি মাত্রায় অর্জন করতে পারবে, সমাজের কল্যাণে কতটুকু অবদান রাখতে পারবে। এটা খুবই সম্ভব যে এই দুই পৃথক প্রচেষ্টার আপেক্ষিক শক্তি জন্মসূত্রে নির্ধারিত হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে তা বহুলাংশে তৈরী হয় মানুষ যে পরিবেশে বেড়ে উঠে তার দ্বারা, সে যে সমাজে বেড়ে উঠে তার কাঠামোর দ্বারা, ঐতিহ্যের দ্বারা, এবং কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের মূল্যায়নের মাধ্যমে। “সমাজ”এর বিমূর্ত ধারণাটি একজন ব্যক্তির কাছে তার সমসাময়িক ও পূর্বতন সবকিছুর সাথে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্কের সমষ্টি। ব্যক্তি নিজে নিজে চিন্তা-চেষ্টা-অনুভব করতে পারে ও কাজ করতে পারে, কিন্তু তার শারীরিক, বৌদ্ধিক ও আবেগিক অস্তিত্বের জন্য সমাজের উপর এত বেশি নির্ভর করে যে, সামাজিক কাঠামোর বাইরে তাকে চিন্তা করা বা বোঝা সম্ভব নয়। সমাজই তাকে সারা জীবন ধরে খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান,যন্ত্রপাতি,ভাষা,চিন্তার পদ্ধতি ও চিন্তার বিষয়ের যোগান দেয়; তার জীবন ধারণ সম্ভব হয় অতীত ও বর্তমানের নিযুত-লক্ষের শ্রমের দ্বারা, যারা এই “সমাজ” নামের ছোট শব্দের পেছনে উহ্য।

ফলে এটা নিশ্চিত যে, সমাজের উপর নির্ভরতা প্রকৃতিতে পিঁপড়া ও মৌমাছির জন্য যেমন সত্য ও অলঙ্ঘ্য, তেমনি মানুষের ক্ষেত্রেও। পিঁপড়া ও মৌমাছির ক্ষেত্রে তাদের সমগ্র জীবন প্রক্রিয়াকে সুক্ষ্ণতম ভাগ পর্যন্ত বিশ্লেষণ করা যায় কিছু নির্দিষ্ট, জন্মসুত্রে প্রাপ্ত সহজাত প্রবৃত্তির মাধ্যমে, আর মানুষের ক্ষেত্রে সামাজিক বিন্যাস আর পারস্পরিক সম্পর্কগুলি নির্দিষ্ট নয় এবং পরিবর্তনশীল। নতুন নতুন কল্পনার সৃষ্টিকারী মানুষের মস্তিষ্ক, ভাষিক যোগাযোগের আশীর্বাদের ফলে এমন উন্নয়নের সম্ভব হয়েছে যা জৈবিক প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই উন্নয়ন সুচিত হয় ঐতিহ্য, প্রতিষ্ঠান, সম্প্রদায়, ভাষা, বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশল অর্জনসমূহ এবং শিল্পকর্মসমূহের দ্বারা। এভাবে বোঝা যাচ্ছে মানুষ কিভাবে তার জীবনকে নিজের কর্মের দ্বারা প্রভাবিত করে এবং এই প্রক্রিয়ায় সচেতন চিন্তা-চাহিদার ভূমিকা রয়েছে।

মানুষ জন্মের সময় উত্তরাধিকারসুত্রে যে শরীরতন্ত্র লাভ করে, আমরা একে অবশ্যই অপরিবর্তনীয় ধরে নেবো, এমনকি বিভিন্ন জৈবিক তাড়নাসমূহ যা মনুষ্য প্রজাতির বৈশিষ্ট্য। সেই সাথে তার জীবদ্দশায় সে লাভ করে মননতন্ত্র, যা সে আয়ত্ত করে সমাজের সাথে তার যোগাযোগ ও অন্য ধরণের প্রভাবের মাধ্যমে। এই মননই সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় এবং অনেকাংশে সমাজের সাথে ব্যক্তির সম্পর্ককে নির্ধারণ করে। আদিম রীতি-পদ্ধতিসমূহের তুলনামূলক অনুসন্ধানের মাধ্যমে আধুনিক নৃবিদ্যা আমাদের জানিয়েছে যে, মানুষের সামাজিক আচরণ বিভিন্ন রকম হতে পারে, এবং এটা নির্ভর করে সমাজে আধিপত্যকারী সংগঠনের উপর এবং বিরাজমান সাংস্কৃতিক মননের উপর। এর ফলে যারা মানবজাতির বৃহৎ অংশের উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তাদেরকে আমি আশাবাদী হতে বলবো কারণ, মানব অস্তিত্ত্বকে বাতিল ঘোষণা করা যায় না, নিজের শারীরিক অস্তিত্বেরর জন্য হলেও নিজেরা একে অপরকে হত্যা করবে না অথবা নিজেকে ধ্বন্স করার মত নির্মম পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে না।

যদি আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি যে, জীবনকে আরামদায়ক করার জন্য এই সামজিক কাঠামো এবং মানুষের সাংস্কৃতিক আচরণ কিভাবে পরিবর্তিত হবে, আমাদের সবসময় কিছু বিষয় সম্বন্ধে সচেতন থাকতে হবে কারণ কিছু কিছু নিয়ামক আমরা কখনোই বদলাতে পারি না। আগেই বলা হয়েছে যে জৈবিক গঠনতন্ত্রের কোন কিছুই কোন ব্যবহারিক কারনেই পরিবর্তন করা যায় না। উপরন্তু বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে সংগঠিত প্রযুক্তি ও জনসংখ্যায় যে পরিবর্তনের ফলেও যে অবস্থার তৈরী হয়েছে তা টিকে থাকবে। তুলনামুলকভাবে ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে কোন জনগোষ্ঠীকে যদি অপরিহার্য দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয় তাহলে এক ধরণের উৎপাদন যন্ত্র কেন্দ্রিক শ্রমবিভাগ আবশ্যক। সে অলস সময়ের অবসান ঘটেছে যখন ছোট গোষ্ঠীগুলোও নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলো। এটা খুব বেশি বাড়িয়ে বলা হবে না যে, মানবজাতির আজ তৈরী হয়েছে সমগ্র গ্রহজুড়ে উৎপাদক শ্রেণী ও ভোক্তাশ্রেণী।

এ পর্যায়ে আমি এখন সংক্ষেপে বলতে পারি এই সংকটের মূল ব্যাপারটা আমার কাছে কি মনে হয়? এ সংকট ব্যক্তির সাথে সমাজের সম্পর্কের সাথে জড়িত। ব্যক্তি অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় সমাজের উপর তার নির্ভরশীলতার ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন। কিন্তু সে এই নির্ভরশীলতাকে অস্তিবাচক সম্পদ হিসেবে দেখে না, জৈবিক বন্ধন ভাবে না, রক্ষাকারী শক্তি মনে হয় না বরং তার স্বাভাবিক অধিকার ও অর্থনৈতিক অস্তিত্বের প্রতি হুমকি মনে করে। সমাজে তার এমন অবস্থান তৈরী হয় যে, তার ইগোকেন্দ্রিক আকাঙ্ক্ষাগুলি সবসময় তুঙ্গে থাকে, আর তার সামাজিক তাড়নাগুলি স্বাভাবিকভাবেই থাকে দুর্বল আর আস্তে আস্তে কমতে থাকে। মানুষ সমাজের যে স্তরেই থকুক না কেন দিনে দিনে এই ক্রমহ্রাসমান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নিজের ইগোর জালে অনিচ্ছাকৃতভাবে বন্দী হয়ে মানুষ নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করে, একাকীত্ব লাভ করে আর জীবনের সহজ, স্বাভাবিক ও সাবলীল আনন্দলভ থেকে বঞ্চিত হয়। মানুষ শুধুমাত্র সমাজের প্রতি আত্মনিবেদনের মাধ্যমেই ক্ষুদ্র ও ঝঞ্ঝাপূর্ণ জীবনের মানে খুঁজে বের করতে পারে।

আমার মতে সকল প্রকার অশুভের উৎস হলো আজকের পুঁজিবাদী সমাজে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য। আমরা আমাদের সামনে দেখতে পাই এক বিশাল উৎপাদক শ্রেণী যারা তাদের যৌথ শ্রমের ফল থেকে পরস্পরকে বঞ্চিত করতে অবিরাম চেষ্টা করছে, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নয়, বরংচ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠিত আইনের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, উৎপাদনের উপায় তথা ভোক্তাপণ্য উৎপাদনের জন্য যে সামগ্রিক উৎপাদকযন্ত্র ও মূলধনজাতীয় দ্রব্যের প্রয়োজন তা আইনীভাবে আধিকাংশেই মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি।

আলোচনার সুবধার্থে এখন থেকে আমি যাদের উৎপাদনের উপায়ের উপর মালিকানা নেই তাদেরকে “শ্রমিকশ্রেণী” বলে আখ্যায়িত করব, যদিও এই শব্দটির যথার্থ প্রায়োগিক জায়গা নয়। উৎপাদনের উপায়ের উপর যার মালিকানা থাকে সে শ্রমিকের শ্রমকে কিনে নেয়ার মত অবস্থানে থাকে। উৎপাদনযন্ত্রে শ্রমিক নতুন দ্রব্য তৈরী করে যা পুঁজিবাদীর সম্পত্তিতে পরিণত হয়। এখানে ধর্তব্য হলো শ্রমিকের উৎপন্ন দ্রব্য ও তার মজুরির মধ্যে প্রকৃত মূল্যে নির্ণায়িত সম্পর্কের ব্যাপারটি। যেহেতু শ্রমচুক্তির ব্যাপারটি “বিনামূল্যে” নির্ধারিত হয়, তাই শ্রমিক যা গ্রহণ করে তা প্রকৃতমূল্যে নির্ণায়িত নয়, বরং তার ন্যূনতম প্রয়োজন এবং পুঁজিপতির প্রয়োজন এবং শ্রমের যোগানের উপর নির্ভর করে। আমাদের অবশ্যই এটা বোঝা দরকার যে, শ্রমিকের মজুরি তার উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য অনুযায়ী নির্ধারিত নয়।

ব্যক্তিগত সম্পত্তি অল্প কিছু ব্যক্তির কুক্ষিগত হতে থাকে। এর কারণ অংশত পুঁজির প্রতিযোগীতা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। ক্রমবর্ধিষ্ণু শ্রমবিভাগের ফলে ছোট ছোট উৎপাদন ইউনিটের জায়গায় বড় বড় ইউনিট গড়ে উঠে। এর ফলে তৈরী হয় এমন এক ব্যবস্থা যেখানে মূলধন জড়ো হতে থাকে সীমিত কিছু ব্যক্তির কাছে, এবং এই শক্তিকে গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক সমাজের দ্বারা আর নিয়ন্ত্রন করা যায় না। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট কারণ নিজেদের প্রয়োজনেই পুঁজিপতিরা নির্বাহী বিভাগকে নির্বাচনের দ্বারা আলাদা রেখে, রাজনৈতিকদলগুলিকে আর্থিক ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে, প্রভাবিত করে এবং এদের মধ্যে থেকেই আবার বিভিন্ন নির্বাহী প্রতিনিধি নিয়োগ করে। এর পরিণতি হলো সমাজের এই সব প্রতিনিধিরা সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর স্বার্থ যথেষ্ট পরিমাণে রক্ষা করতে পারেনা। আর এ অবস্থায় এই সব পুঁজিপতিরাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সকল প্রকার প্রধান সংবাদ মাধ্যমকে/ তথ্য উৎসকে নিয়িন্ত্রণ করে(প্রেস, রেডিও, শিক্ষা )। এর ফলে একজন ব্যক্তির পক্ষে নৈর্ব্যক্তিক উপসংহারে উপনীত হওয়া বা তার রাজনৈতিক অধিকারসমূহের সঠিক ব্যবহার দুষ্কর এবং কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ে।

মূলধনের উপর ব্যক্তিগত মালিকানার ধারণাকেন্দ্রিক এই অর্থণীতির বিরাজমান অবস্থাকে দুটি মূল নীতির দ্বারা সুচিত করা যায়ঃ প্রথমত উৎপাদনের উপায়(মূলধন) ব্যক্তিগত মালিকানায়, মালিকেরা নিজের ইচ্ছামতো এর বিনিময় করে এবং দ্বিতীয়ত বিনামূল্যের শ্রমচুক্তি। অবশ্য এর ফলে প্রকৃতপক্ষে বিশুদ্ধ পুঁজিবাদী সমাজ বলতে কোন কিছু নেই। এটা বোঝা উচিত যে, শ্রমিকশ্রেণীকে তিক্ত রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের মধ্য দিয়ে কিছু শ্রেণীর শ্রমিকের জন্য “বিনামূল্যের শ্রমচুক্তির” চেয়ে ভালো কোনো অবস্থায় পৌছে গেছে। তবে মোটের উপর এই অবস্থা “বিশুদ্ধ” পুঁজিবাদ থেকে খুব বেশি পৃথক নয়।

উৎপাদন করা হয় মুনাফার জন্য, চাহিদা অনুযায়ী নয়। এমন কোনো ব্যবস্থা নেই যে সমর্থ ও ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য সবসময় কর্মসংস্থানের সযোগ রয়েছে, একটা বিশাল “বেকার জনতা” সবসময়ই পাওয়া যায়। একজন শ্রমিক সবসময় তার কাজ হারানোর ভয়ে থাকে। যেহেতু বেকার এবং নিম্ন আয়ের শ্রমিকেরা মুনাফাজনক বাজারের তৈরী করে না, তাই ভোক্তা দ্রব্যের উৎপাদন সীমিত আকারে ঘটে যার ফলাফল বিপুল দুর্ভোগ। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রায়শই সকলের শ্রমের বোঝা কমানোর চেয়ে বেশি করে বেকারত্বের সৃষ্টি করে। মূলধনের বন্টন ও সুষ্ঠ ব্যবহার না হবার ফলে যে ক্রমবর্ধমান হতাশার উদ্রেক হচ্ছে তার জন্য দায়ী হলো মুনাফাকেন্দ্রিক চিন্তা আর সেই সাথে পুঁজিপতিদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগীতা। এই অসীম প্রতিযোগীতার ফলে ঘটে শ্রমের বিরাট অপচয় ও সামাজিক সচেতনতার প্রতি ব্যক্তির অনীহা যা আমি আগেই উল্লেখ করেছি।
ব্যক্তিমানুষের এই অনীহাকে আমি পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা মনে করি। সম্পূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা এই সমস্যা ভোগ করে। এক ধরণের অতিশায়িত প্রতযোগীতামূলক ভীতি একজন ছাত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়, তাকে ভবিষ্যত জীবনের জন্য অর্জিত সাফল্যের সাধনার শিক্ষা দেয়া হয়।

আমি মনে করি এই সব ভয়াবহ সমস্যার দূর করা সম্ভব সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা ও একই সাথে এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থার বিকাশ যার উদ্দিষ্ট হবে সামাজিক লক্ষ্যসমূহ অর্জনের দিকে। এধরণের ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপায়সমুহের মালিকানা থাকবে সমাজের হাতে এবং উপযোগের ব্যবহার ঘটবে সূষ্ঠু। একটি পরিকল্পিত অর্থনীতি যা উৎপাদনের সাথে সমাজের চাহিদার সমন্বয় সাধন করে, সকল কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে সঠিকভাবে কাজের বন্টন করবে এবং প্রত্যেক নর, নারী ও শিশুর জীবন নির্বাহ নিশ্চিত করবে। প্রত্যেক ব্যক্তির শিক্ষা তার সহজাত প্রবৃত্তির উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজে ক্ষমতা ও সাফল্যের জায়গায় এক ধরণের দায়িত্ববোধ তৈরী করবে।

এটা খেয়াল রাখতে হবে যে পরিকল্পিত অর্থনীতির মানেই সমাজতন্ত্র নয়। পরিকল্পিত অর্থনীতি ব্যক্তির দাসত্বের মধ্য দিয়েও অর্জিত হতে পারে। সমাজতন্ত্রে উত্তরণের জন্য কয়েকটি দুরহ সমাজ-রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবেঃ কিভাবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রিয়করণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, আমলাতন্ত্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হওয়া ও অনিয়ন্ত্রিত অবস্থা ঠেকানো যাবে? ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষা করে বিপরীতে কিভাবে গনতান্ত্রিক আমলাতন্ত্রের ক্ষমতা নিশ্চিত করা যায়?

সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য ও সমস্যা সম্বন্ধে স্পষ্টতা আমাদের এই পরিবর্তনের যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যেহেতু বর্তমানে এই সমস্যাগুলি নিয়ে মুক্ত ও অবাধ আলোচনার খুব বেশি সুযোগ নেই আমি মনে করি জনকল্যাণে এই পত্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

Monday, March 10, 2008

নারী দিবসে সরকারের উপহার...

[এই লেখাটা আমি আগে সামহোয়্যারইন এ দিয়েছিলাম, এখনে কোরআনের সুরাটা সহ পোষ্ট করলাম]


১৯৬১ সালে সামরিক শাসক আইয়ূব খান তকালীন পাকিস্তানের হিন্দু ও মুসলিম পারিবারিক আইনের কিছু সংস্কার করেছিলেনসংস্কার করেছিলেন কথাটা ভুল এই অর্থে আইন প্রণয়ন করা আর সংস্কার করা এক নয়হিল্লা বিয়ে ও তালাক সংক্রান্ত যে আইনগুলি তখন পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী চালু করে গিয়েছিলো তা যে প্রায়োগিক অর্থে নয় তার প্রমাণ আমরা নব্বইয়ের দশকের কিছু ঘটনা থেকে অনুমান করতে পারিআজ পর্যন্ত সেই আইনগুলির যথার্থ অনুধাবন ও পালন হয়ত সম্পূর্ণ হয়নিখোদ পাকিস্তানে তো নয়ই, আমাদের দেশেও নয়৭২ সালের সংবিধানেও উপরোক্ত ব্যবস্থা বলব ছিলো
এই সপ্তাহে সরকার "জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা" শীর্ষক কিছু নীতিমালা প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদে পাশ করেছেএখানে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে এসেছে মুসলিম আইনে উত্তরাধিকার সম্পত্তির ক্ষেত্রে সমানাধিকার এবং বৈবাহিক সম্পর্ক সংক্রান্ত নানা নীতিমালাআমরা অবশ্যই সরকারের এই নীতিমালাকে সাধুবাদ জানাইকারণ ১৯৯৭ ও ২০০৪ সালে দুইবার জনপ্রিয়(popular) গনতান্ত্রিক সরকার নানা কারণে একই নীতিমালা প্রণয়নে ব্যার্থ হয়েছিলো
View this link
এবারের পদক্ষেপে আমি ২ টা ব্যাপার সবাইকে খেয়াল করতে বলবঃ
১) ইসলামী দলগুলির প্রতিক্রিয়া
View this link দৈনিক সমকাল, ১০ই মার্চ, ২০০৮[প্রথম পাতা]
২) আমাদের বোধের জায়গা, অর্থা আমরা মানে দেশের জনগনের বোধের জায়গাটার ক্ষেত্রে এই আইন প্রনয়নের ও বাস্তবায়নের যথার্থতা, কারণ স্পস্টতই এই সমানাধিকার আইন ইসলামী বিধানের পরিপন্থী

এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে, আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন ছাত্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার কারণে কুন্ঠিততবে সাবেক সরকার প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের একটি মন্তব্য আমাকে বিস্মিত করেছে,"...জনগনকে এই সরকার সম্বন্ধে অতিরিক্ত কৌতুহল নিবৃত্তি করতে হবে..."

আমাদের গবর্নমেন্ট নামে একটা পাঠ্য বিষয় ছিলো, ওখানে পড়া এক ধরণের বিশেষ সরকার ব্যবস্থার সাথে এই উক্তির মিল পাওয়া যায়, আপনারা একটু চেষ্টা করলেই বুঝতে পারবেন

পিতৃ সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত আল-কোরআনের সুরা নিসা


Wednesday, January 9, 2008

An article by Jafar Iqbal in Pratham Alo

[taken from http://www.mukto-mona.com/Articles/zafar_iqbal/ghrina_theke_mukti.htm]

ঘৃণা থেকে মুক্তি চাই
মুহম্মদ জাফর ইকবাল

বছর ত্রিশেক আগে আমি যখন আমেরিকায় পিএইচডি করছি, তখন স্টিভ মোজলে নামে আমার একজন আমেরিকান বন্ধু কলেরা হাসপাতালে কাজ করতে এসেছিলএখানে কয়েক মাস কাজ করে সে যখন আমেরিকা ফিরে গিয়েছে, তখন একদিন আমাকে বলেছিল, ‘উনিশ শ একাত্তর সালে তোমাদের বাংলাদেশে যা ঘটেছে, সেটা এত অবিশ্বাস্য রকমের নিষ্ঠুর যে আজ থেকে দশ-বিশ বছর পর সেটা আর কেউ বিশ্বাস করবে নাতার কথার গুরুত্ব আমি তখন ধরতে পারিনি, এখন পারছিসত্যি সত্যি একাত্তরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাদের আজ্ঞাবহ অনুচরদের নিয়ে এই দেশে কী করেছিল, সেটি বললে সভ্য জগতের মানুষেরা অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকায়বাইরের মানুষের কথা ছেড়ে দিই, এই দেশের নতুন প্রজন্ন পর্যন্ত পাকিস্তান নামক দেশটিকে জানে একটি ক্রিকেট টিমের দেশ হিসেবে, মোবাইল কোম্পানির বড় কর্মকর্তার দেশ হিসেবেআমরাশুধু আমরা, যারা সেই একাত্তরকে নিজের চোখে দেখেছি, তারা জানি সেটি কী ভয়ঙ্কর ধরনের নিষ্ঠুরতা ছিল, কী অবিশ্বাস্য নৃশংসতা ছিলএই দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের একজনও ছিল না, যারা তার কোনো একজন আপনকে হারায়নিসাড়ে সাত কোটি মানুষের ভেতর এক কোটি মানুষকে যদি শুধু প্রাণ বাঁচানোর জন্য অন্য দেশে গিয়ে শরণার্থী হতে হয়, তাহলেই যে কেউ অনুমান করতে পারবে বিষয়টা কত ভয়ঙ্কর ছিলযদি তারা শরণার্থী হয়ে পালিয়ে না যেত, তাহলে যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আর তাদের আজ্ঞাবহ অনুচররা তাদের প্রত্যেককে হত্যা করত, সেটা কী সবাই জানে?

আমরা যারা একাত্তরকে নিজের চোখে দেখেছি, শুধু তারাই জানি ঘৃণা কাকে বলেএই পৃথিবীতে খুব বেশি মানুষ নেই, যারা আমাদের মতো করে সেই ঘৃণাকে অনুভব করতে পারবেএই ঘৃণা শুধু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য নয়, এই ঘৃণা শতগুণে বেশি একাত্তরের রাজাকার-আল-বদর, আল-শামসদের জন্য, যার বেশির ভাগ ছিল জামায়াতে ইসলামীর সদস্যআমার কাছে কেউ যখন জানতে চায়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার জন্য তারা কোন বই পড়বে, আমি তখন তাদের শুরু করার জন্য যে চারটি বইয়ের নাম বলি তার একটি হচ্ছে পাকিস্তানি মেজর সিদ্দিক সালিকের লেখা উইটনেস টু সারেন্ডার বইটিসেই বইয়ের এক জায়গায় লেখা আছে, পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদেরা সরাসরি মিলিটারি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছিল যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে কাজ করার জন্য রাজাকার-আলবদর-আল শামস নামে যে আধা সামরিক বাহিনী তৈরি করেছে, সেটা আসলে জামায়াতে ইসলামীরই বাহিনীসেই একাত্তরেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীই নির্দেশ দিয়েছিল, ব্যাপারটা যেন এত খোলামেলাভাবে প্রকাশ না পেয়ে যায়

সেই জামায়াতে ইসলামীর বদর বাহিনীর কমান্ডার এখন বলছে, এ দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই? রক্তস্মাত এই দেশে সেই মানুষগুলো এত বড় দুঃসাহস কোথা থেকে পায়?

২.

১৯৭১ সালে দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকদের নিয়ে যে আধাসামরিক বাহিনীগুলো তৈরি করা হয়েছিল, তার মধ্যে রাজাকার বাহিনী ছিল সমাজের একেবারে নিচু শ্রেণীর মানুষদের নিয়েসেই একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এত হম্বিতম্বির পরও কোনো আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মানুষ রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়নিযারা যোগ দিয়েছিল, তারা ছিল ভীতু ও কাপুরুষ, একজন মুক্তিযোদ্ধা এক-দুজন নয়, একসঙ্গে এক-দুই শ রাজাকারকে বন্দী করে ফেলতে পারতসেই তুলনায় বদর বাহিনী ছিল অনেক ভয়ঙ্করতার কারণ, এই বাহিনীর সদস্য ছিল জামায়াতে ইসলামীর সে-সময়কার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যরাএকজন সাধারণ মানুষ যত বড় অপরাধীই হোক, অন্য একজন মানুষকে হত্যা করতে ইতস্তত করে, অপরাধ বোধে ভোগে কিন্তু এই বদর বাহিনী ইতস্তত করত না, তাদের ভেতর কোনো অপরাধবোধ ছিল নাকারণ তারা হত্যাযজ্ঞ চালাত ইসলামের নামে, পাকিস্তানের নামেএকাত্তরে, সমগ্র পাকিস্তান আল-বদর বাহিনীর কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামীর দেওয়া দুই-একটি বাণীপড়লেই সেটা বোঝা যায়যেমন যশোরে রাজাকার বাহিনীর সভায় বলা হয়েছিল, ‘আমাদের প্রত্যেককে একটা ইসলামি রাষ্ট্রের মুসলমান সৈনিক হিসেবে পরিচিত হওয়া উচিত এবং মজলুমকে আমাদের প্রতি আস্থা রাখার মতো ব্যবহার করে তাদের সহযোগিতার মাধ্যমে ওই সব ব্যক্তিকে খতম করতে হবে, যারা সশস্ত্র অবস্থায় পাকিস্তান ও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত আছে!’ (প্রথম আলো, ৩০ অক্টোবর ২০০৭) তারা সবাই মিলে এই দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের খতমকরেছেস্বাধীনতাযুদ্ধের একেবারে শেষমুহুর্তে যখন আবিষ্ককার করেছে সত্যি এ দেশটি স্বাধীন হতে যাচ্ছে, তখন যেন এই দেশটি মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য এই দেশের বুদ্ধিজীবীদের খতমকরেছেস্বাধীনতাযুদ্ধের এত বছর পরও সেটি নিয়ে তাদের ভেতরে কোনো অনুশোচনা নেই, কোনো অপরাধবোধ নেইএখন দেখছি তাদের ভেতরে এক ধরনের অহঙ্কার আছে! পূর্ব পাকিস্তান আল-বদর বাহিনীর কমান্ডার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মুখ থেকে উচ্চারিত হয়, এই দেশে কোনো স্বাধীনতাবিরোধী নেই, ছিল না!

কেমন করে এটা ঘটেছে আমরা সেটা খানিকটা জানি, খানিকটা অনুমান করতে পারি১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে আমি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছি; কিছুদিনের ভেতরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ আমাকে একটা তদন্ত কাজে লাগিয়ে দিলছাত্রদলের ছেলেরা তখন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের তেজস্বী কন্ঠস্বরতারা কোনো একটা অনুষ্ঠানে রাজাকারদের গালাগাল করেছে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন ছাত্র তখন একজন ছাত্রনেতাকে চাকু মেরে দিয়েছেআমি আমাদের তদন্ত কমিটি নিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছিসেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে শিবিরের ছেলেটিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্ককার করা হয়েছিল

তারপর এই দেশে খুব বিচিত্র একটা ব্যাপার ঘটলমুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাজাকারদের বিপক্ষে কথা বলার জন্য যে তেজস্বী ছাত্রটি চাকু খেয়েছিল, তার রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে জেতার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একটা জোট করলআমি খবরটি একবার, দুইবার, একশবার পড়েও বুঝতে পারি না, যে জিয়াউর রহমান এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার, তার হাতে তৈরি দল স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করেছে? সেটা কীভাবে সম্ভব? নির্বাচনে জেতা কী এতই জরুরি? আদর্শ বলে কিছু নেই? দেশের জন্য মমতা বলে কিছু নেই?

এ রকম সময়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকরণ নিয়ে এক ধরনের উত্তেজনাএকদিন আমি সবিস্নয়ে দেখি ছাত্রদলের চাকু খাওয়া সেই ছেলেটি ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিচ্ছেবক্তৃতার বিষয় অত্যন্ত সহজ ও সরলআমাকে কুসিত গালাগালআমি নিজের কানে শুনছি, অবিশ্বাস করি কীভাবে?

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেটা ঘটেছিল, সারা দেশে সেটা ঘটতে লাগলমুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান ভুঁইয়া বদর বাহিনীর কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামী আর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পাশে বসে দেশ শাসন করতে লাগলেনআমি রাজনীতি বুঝি না, রাজনৈতিক বিশ্লেষকও নই, কিন্তু আমি ১৯৭১ সালের জামায়াতে ইসলামীকে দেখেছি, তাই আমি জানি এই দলটি কী! আমি খবরের কাগজে একদিন লিখেছিলাম, জামায়াতে ইসলামী একদিন বিএনপির হাড়-মাংস-মজ্জা শুষে খেয়ে তার চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাবে

বিএনপি ও তার হর্তাকর্তারা কি সেই ডুগডুগির আওয়াজ শুনছেন?

৩.

তবুও হিসাব মিলতে চায় নাজামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে বিএনপি যেভাবে দেশ শাসন করেছে, সেটা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কময় দেশ শাসনশুধু যে লুটপাট এবং লুন্ঠন তা নয়, জঙ্গি বাহিনীকে সারা দেশে পাকাপোক্তভাবে শিকড় গেড়ে বসিয়ে দেওয়া, দেশের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে নিজেদের মানুষ বসিয়ে দেওয়ার কাজটিও তারা ভালোভাবে শেষ করেছেকিন্তু সেই পাঁচ বছরের শাসনামলেও বদর বাহিনীর কমান্ডার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মুখ থেকে যে কথাগুলো বের হয়নি, এখন কেন সেগুলো বের হচ্ছে? প্রকাশ্য টেলিভিশনে সাবেক এক সচিবের মুখ দিয়ে সেগুলো কেমন করে সমর্থিত হচ্ছে? এই সময়টা কি বিশেষ একটা সময়?

আমার এখন মনের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করেগোয়েন্দা বাহিনী থেকে এই দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেলে একটা কাগজ পাঠানো হয়েছে, সেখানে এই দেশের বিশেষ এক ধরনের বুদ্ধিজীবী আর তাদের টেলিফোন নম্বর দেওয়া আছেটেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যখন কোনো টক শো করবে, তখন অবশ্যই এই তালিকা থেকে একজন বুদ্ধিজীবীকে রাখতে হবেসেই বুদ্ধিজীবীর তালিকা দেখে আমার আক্কেললগুডুম হয়ে গেছে, সাহস করে কোনো একটা পত্রিকা যদি সেই তালিকা প্রকাশ করত, তাহলে দেশের মানুষেরও আক্কেলগুডুম হয়ে যেতএর বড় অংশ হচ্ছে উগ্র ডানপন্থী, যদি এটাই এই দেশের বর্তমান রাষ্ট্রক্ষমতার মতাদর্শ হয়ে থাকে, তাহলে অনুমান করতে সমস্যা হয় না, শাহ আবদুল হান্নান বা মুজাহিদের ঔদ্ধত্যের শক্তিটুকু কোথায়

তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ওপর আমার বিশ্বাস আছেএই মানুষগুলোর ধৈর্য ধরার ক্ষমতা অসাধারণ, কিন্তু যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন অবস্থার পরিবর্তন করেমাইনাস টু, প্লাস ওয়ান, সিল দেওয়া সংস্কার, ঝড়যন্ত্র থিয়োরিএই বিষয়গুলো কেউ বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই তারা বুঝে ফেলেআল-বদর বাহিনীর কমান্ডার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের এবারকার বক্তব্যটি এই দেশের মানুষের কাঁচা নার্ভকে স্পর্শ করেছেযখন টেলিভিশনে এটা প্রচার করা হয়েছে তখনই আমার কাছে অসংখ্য টেলিফোন, এসএমএস এসেছে সেটা দেখার জন্যএই দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী বদর বাহিনীকে আমি এত ঘৃণা করি যে তাদের যেন দেখতে না হয় সে জন্য আমি টেলিভিশনের কাছে পর্যন্ত যাই নাআমি জানি আমি একা নই, এই দুঃখী দেশটার জন্নপ্রক্রিয়া যারা দেখেছে, তাদের কারও পক্ষে এই মানুষগুলোর চেহারা দেখা সম্ভব নয়

মনে হচ্ছে দেশের মানুষের হঠা করে এক ধরনের আত্মোপলব্ধি হয়েছে, সবাই ভাবছে, এ কী হলো? যে মানুষগুলো এই দেশের স্বাধীনতাই চায়নি, যারা এই দেশের সোনার ছেলেদের আক্ষরিক অর্থে জবাই করেছে, তারা দাবি করছে, এই দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধ হয়নি? এই দেশে কোনো জেনোসাইড হয়নি? যে তথ্যগুলো আমাদের প্রজন্ন নিজের চোখে দেখে এসেছে, কয়েকদিন থেকে সেই তথ্যগুলো খবরের কাগজে আসতে শুরু করেছেএকাত্তরের পরের প্রজন্ন দেখতে শুরু করেছে পাকিস্তানের নামে আর ইসলামের নামে এই দেশে কত বড় নৃশংসতা করা হয়েছেতারা কি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারবে?

৪.

আগামী ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখ নিউইয়র্কের কিন ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশের জেনোসাইডেরে ওপর একটা সেমিনার হতে যাচ্ছেএই সেমিনারটির জন্য খাটাখাটুনি করছে নতুন প্রজন্েনর কিছু তরুণআমার জানামতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে একটি সেমিনার এই প্রথমসেমিনারে আলোচ্য বিষয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার পাশাপাশি এই দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যার কথাগুলো উঠে আসবেসেনাবাহিনীর আজ্ঞাবহ রাজনৈতিক দল, তাদের তৈরি আধা সামরিক বাহিনী এবং সেই বাহিনী প্রধানদের নাম হিসেবে গোলাম আযম-নিজামী-মুজাহিদের নামও উঠে আসবেসেই নামগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিবদ্ধ হবে, সেমিনারের পঠিত প্রবন্ধ হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি থেকে সারা পৃথিবীর তথ্যসম্ভারে সারা জীবনের জন্য সংরক্ষিত হয়ে যাবেআমরা যখন বেঁচে থাকব না, তখনো আমাদের পরবর্তী প্রজন্ন সেই আনুষ্ঠানিক তথ্যের রেফারেন্স যুগযুগ ধরে ব্যবহার করতে পারবেবাংলাদেশের সত্যিকারের ইতিহাস রক্ষার জন্য এটি খুব বড় একটি উদ্যোগ, উদ্যোক্তাদের জন্য রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা

৫.

খবরের কাগজে দেখেছি আমাদের বিজয়ের মাসে ডিসেম্বরের ৩ তারিখ মুক্তিযোদ্ধা মহাসমাবেশ হবেএই দেশের নতুন প্রজন্ন যদি দেশকে ভালোবাসতে চায়, তাহলে তাদের দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস জানতে হবেএই দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মতো গৌরবের বিষয় আর কী হতে পারে? আমরা তাই দেশের ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনানোর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিসেই অনুষ্ঠানে আমরা যখন যে মুক্তিযোদ্ধাকে অুনরোধ করেছি তারা তাদের শত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দিয়ে ছোট বাচ্চাদের যুদ্ধের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেনমুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলে আমি আবিষ্ককার করেছি, তাদের অনেকের বুকের ভেতর এক ধরনের অভিমান রয়ে গেছেযে দেশকে রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছেন, সেই দেশে যুদ্ধাপরাধী গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে ঘুরে বেড়ায়, তাঁরা যদি অভিমান না করেন তাহলে কারা করবে?

আমার খুব ভালো লাগছে যে এবার এই দেশের মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের অভিমানের কথা ভুলে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছেনসব সেক্টর কমান্ডার বলছেন, অনেক হয়েছেআর নয়তাঁরা এই দেশকে জঞ্জালমুক্ত করবেনএই দেশের অবস্থা এমন হয়েছে যে সত্যি কথাটিও কেউ বলতে পারে না, তার মধ্যে একটা রাজনীতির গন্ধ খুঁজে বের করে সত্য কথাটিরও ভুল অর্থ করে ফেলা হয়মুক্তিযুদ্ধের বীর সেক্টর কমান্ডারদের সেই ভয় নেই, তাঁরা এই দেশের সবচেয়ে সম্মানী মানুষ, তাঁদের নেতৃত্বে এই দেশে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম হয়েছেতাঁদের মুখের কথা এই দেশের মানুষ বিশ্বাস করেআমরা চাই, তাঁরা আবার আমাদের একটুকু নেতৃত্ব দিন, এই দেশের ইতিহাস অনেক গৌরবের, কলঙ্কের অংশটুকু অপসারণ করার দায়িত্বটুকু তাঁরা গ্রহণ করুনতাঁদের সঙ্গে এই দেশের সব মানুষ আছেন, থাকবেননির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, তারাও নীতিগতভাবে মনে করে যুদ্ধাপরাধীদের এই দেশে নির্বাচনের অধিকার নেইসারা দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের আত্মোপলব্ধি, এক ধরনের জাগরণের সৃষ্টি হয়েছেবীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে পরাস্ত করার যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলস্বাধীনতার তিন যুগ পর তাঁরা দ্বিতীয়বার স্বাধীনতার শত্রুদের পরাস্ত করার নেতৃত্ব নেবেন, আমরা সেটুকু আশা করিতাঁদের পাশে থাকার জন্য এ দেশের সব ছাত্র-শিক্ষক-জনতা প্রস্তুত হয়ে আছে

স্বাধীনতা সংগ্রামের সেই দিনগুলোর কথা স্নরণ করলে আমরা যেন এই দেশের মানুষের ত্যাগ বীরত্ব আর অর্জনের কথা মনে করার আনন্দটুকু অর্জন করতে পারিস্বাধীনতাবিরোধীদের নৃশংসতার কথা মনে করে আমরা আর ঘৃণা, ক্রোধ আর ক্ষোভ অনুভব করতে চাই নাসেটুকু একবারের মতো আমরা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চাই

এ রক্তস্মাত দেশের রক্তের ঋণ আমরা চিরতরে শোধ করে দিতে চাই

সৌজন্যঃ প্রথম আলো

মুহম্মদ জাফর ইকবাল: লেখক অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়